Blogger Widgets চীনা 'আলিবাবা' মা ইউনের এখন সবচাইতে বড় ই-কমাস প্রতিফ্ঠান। | প্রযুক্তিকথন.কম

চীনা 'আলিবাবা' মা ইউনের এখন সবচাইতে বড় ই-কমাস প্রতিফ্ঠান।

 


    আজ চীনের ইণ্টার্নেটের বিশিষ্ট ব্যক্তি মা ইউনের পরিচালিত 'আলিবাবা' নামক বিশ্বের বৃহত্তম 'ই কমার্স নেটওয়ার্ক' যে কিভাবে চীনস্থ ইয়াহু কোম্পানির সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে কিনে নিয়েছে, তারই কথা আলোচনা হচ্ছে।

    মাত্র ৯ বছর আগে মা ইউন ছিলেন চীনের ইণ্টার্নেট মহলে এক্কেবারে অপরিচিত ব্যক্তি। তাঁর নিজের ওয়েব সাইটের গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারণা করে বেড়াতেন । অনেকেই তাঁকে একজন প্রতারক বা ঠগ বলে মনে করে দ্রুত দূরে সরে যেতেন। তবে ৯ বছর পর অর্থাত্ গত আগষ্টে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত এক তথ্যজ্ঞাপন সভায় মা ইউন ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর 'আলিবাবা' কোম্পানি সাফল্যের সঙ্গে চীনস্থ ইয়াহু কোম্পানির সমস্ত সম্পত্তি কিনে নিয়েছে এবং একই সময়ে ইয়াহু কোম্পানির কাছ থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুঁজি পেয়েছে। এটা চীনের ইণ্টার্নেটের ইতিহাসে বৃহত্তম আত্মীকরণের ঘটনা। এ প্রসঙ্গে মা ইউন গর্বের সঙ্গে বলেছেন " ২৬শে জুলাই আমি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে বিমান থেকে নেমেই ঐ সব আইনকর্মকর্তাকে বলেছি, এটা আলিবাবা ইয়াহুকে কিনে নিচ্ছে, এটা জয়েণ্ট ভেঞ্চার নয়, এটা 'ইয়াহু যে আলিবাবাকে কিনে নিচ্ছে' তা নয়। এই ভিত্তিতেই আলোচনা চালাতে হবে, নইলে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই।"

    সেবারকার আত্মীকরণের মাধ্যমে আলিবাবা কোম্পানি পেয়েছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুঁজি । তা'ছাড়া সঙ্গে সঙ্গে পেয়েছে এক মস্ত বড় "উপঢৌকন", অর্থাত্ চীনস্থ ইয়াহু কোম্পানির 'পোর্টাল' ওয়েব সাইট , সার্চ ওয়েব সাইট, উপস্থিত মতো তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা, বিজ্ঞাপন এবং চীনস্থ  ইয়াহু কোম্পানির ব্রেণ্ড স্থায়ীভাবে ব্যবহার করার অধিকার । এই সব কিছুর বিনিময়ে আলিবাবা কোম্পানি যা দিয়েছে, তা হলো: ৪০ শতাংশ শেয়ার, ৩৫ শতাংশ ভোটদানের অধিকার এবং ডিরেক্টরস বোর্ডের একটি আসন।

    সবার জানা কথা যে , ইয়াহু কোম্পানি হলো ইণ্টার্নেট মহলের এক প্রভাবশালী বিরাট কোম্পানি,যা ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে ২৫টি কোম্পানি কিনে নিয়েছে। এর আগে ইয়াহু কোম্পানি কখনও নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে নি । তা'হলে মা ইউন কী -যাদুশক্তিতে চীনস্থ ইয়াহু কোম্পানি কিনে নিলেন ? তিনি নিজেই বলেছে , "আমারও সাধারণ লোকের মতো শুধু একটি মাথা, বরং আমি পাতলা এবং চেহারা কুতসিত। তবে আমি মনে করি, পুরুষের বুদ্ধি তার চেহারার ঠিক উল্টা।"

    ১৯৬৪ সালে মা ইউনের জন্ম পূর্ব চীনের হাংচৌ শহরে। স্কুল থেকে স্নাতক হবার পর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য তিন তিন বছর পরীক্ষা দিলেও ভর্তি হতে পারেন নি। অবশেষে ছোটখাট একটি কলেজে ভর্তি হয়ে ইংরেজি পড়েছেন। এই কলেজ থেকে স্নাতক হবার পর মা ইউন হাংচৌ ইলেক্ট্রোনিক্স প্রকৌশল ইনস্টিটিউটে একজন শিক্ষক হন । প্রথম দিকে তাঁর যেমন না ছিল প্রযুক্তির ব্যাকগ্রাউণ্ড, তেমনি না ছিল কোনো পুঁজি । প্রায় শূণ্য থেকে শুরু করলেন তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে।

১৯৯৬ সালে পেইচিংয়ে তার ওয়েব সাইটের গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে চেষ্টা করেছেন , কিন্তু কেউই সাড়া দিতে চায় না। তিনি বাধ্য হয়ে পেইচিং ত্যাগ করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি হাংচৌ ফিরে গিয়ে আলিবাবা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই মা ইউনের ব্যবসার একটি "টার্নিং পয়েণ্ট"। ঠিক এই সময়পর্বে চীনে ইণ্টার্নেট শিল্প উন্নয়নের হিড়িক পড়েছে, কিন্তু অচিরেই আবার মন্দা অবস্থা শুরু হয়। ২০০০ সালে নেটওয়ার্ক অর্থনীতির ভূঁইফোড় হবার স্বপ্ন ভেঙে চূর্ণবিচুর্ণ হয়। এর প্রভাবে আলিবাবা কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রস্থ অফিস এবং চীনের বিভিন্ন অঞ্চলস্থ কার্যালয়গুলো পর পর বন্ধ হয়ে যায়। তবুও মা ইউন দমে যান নি, বরং শেষ পর্যন্ত টিকে গেলেন।

    পেইচিংয়ের ই কমার্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ওয়াং চুনথাও বলেছেন, "আসলে ইন্টার্নেটের এই মন্দাবস্থা হলো এই শিল্পে পুঁজিবিনিয়োগকারীদের জন্য এবং ইণ্টার্নেটের তথ্যমাধ্যমগুলোর জন্য এক "শীতকাল"। যদি এই মন্দাবস্থা আরও বেশি সময় স্থায়ী হতো , তা'হলে আলিবাবার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী সামর্থ্য-সম্পন্ন কোম্পানির জন্য বরং বেশি উপকার হতো।কারণ এই শিল্পের পরিবেশ আসলে খুব 'ঠাণ্ডা' ছিল না, চীনের ইণ্টার্নেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা খুব বেশি , ই কমার্সে প্রবেশকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যা বরং সেই কয়েক বছরে খুব দ্রুত বেড়েছে ।"

    মা ইউনের আলিবাবা কোম্পানির উদ্ভাবিত পদ্ধতি হলো এমন ব্যবস্থা করে দেয়া, যাতে মাঝারি ও ছোট কোম্পানি ইণ্টার্নেটের মাধ্যমে সরাসরি ব্যবসা চালাতে পারে । এই কাজ অতি জটিল এবং কষ্টসাধ্য । মা ইউনও অসুবিধায় পড়লেন, এমন সময়ে সফ্ট ব্যাংকের প্রধান সুন চেংয়ি তাঁর কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।

    ২০০১ সালে আলিবাবা কোম্পানি সুন চেংয়ির ২ কোটি ডলারের ঝুঁকিমূলক পুঁজি পেল এবং তা দিয়ে মা ইউনের আলিবাবা কোম্পানি মন্দাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারলো। ২০০৩ সালে চীনে যদিও মারাত্মক সার্স রোগের প্রকোপ দেখা দেয় , আলিবাবা কোম্পানির অফিসও পৃথক করে রাখার ব্যবস্থা নেয়া হলো। কিন্তু তবুও আলিবাবা কোম্পানি আগের মতোই কাজ করে চললো, তার ই কমার্স ব্যবস্থা তার বিরাট সুপ্ত শক্তি পরিস্ফূর্ত করতে পারলো। সার্সের গুরুতর চ্যালেঞ্জ বরং মা ইউনের জন্যে শাপে বর হলো। তার আলিবাবা কোম্পানির ব্যবসা সার্স প্রকোপের সময়পর্বে ৬ গুণ বেড়ে গেল। ঐ বছরে আলিবাবার দৈনিক আয় ছিল ১০ লাখ ইউয়ান। ২০০৪ সালে আরও বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, তার দৈনিক মুনাফাই ছিল ১০ লাখ ইউয়ান।

    মাই ইউনের দৃঢ় প্রত্যয় ও নাছোড়বান্দা চরিত্র প্রসঙ্গে মেধাসম্পদ বিশেষজ্ঞ ছেন আনচি বলেছেন, "পৃথিবীতে অপরাজেয় প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাঁর এই শিল্পক্ষেত্রে তিনি এক কিংবদন্তিমূলক বীরব্যক্তি হলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে বিনয়ী হতে হয়। তা'হলেই শুধু হঠাত্ পরাজিত হবেন না।"

    মা ইউনের চোখে ই কমার্স হচ্ছে এক গুপ্ত ধন, যা এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো হয় নি। ইয়াহু কোম্পানি যে আলিবাবা কোম্পানির মোটা অংকের শেয়ার কিনেছে, তার কারণ চীনের দ্রুত বর্দ্ধমান ইণ্টার্নেট-বাজারের বিরাট সম্ভাবনার উপলব্ধি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন